মাগুরার বহুল আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি শেষে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রের ক্রমানুসারে সাক্ষির জন্য আগামী ধার্য তারিখে ১-৩ নম্বর সাক্ষীদের সমন প্রদান করা হয়েছে।মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, বিচারক এম জাহিদ হাসান’র আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে শুনানি শেষে অভিযোগ গঠন করা হয়।
চার্জশিটের ক্রম অনুসারে বিচারক আগামী ২৭ এপ্রিল তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। এর আগে বিচারক এম জাহিদ হাসান আসামিদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করতে চান কি না প্রশ্ন করলে তারা আইনজীবী নিয়োগ দিতে ইচ্ছুক বলে অনুরোধ করেন।
এ সময় বিচারক তাদেরকে আইনজীবী নিয়োগ প্রক্রিয়া বুঝিয়ে দিয়ে জেল সুপারের মাধ্যমে লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করতে বলেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর আরোও বলেন, প্রধান আসামি হিটু শেখ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলেও চার্জ গঠনের সময় হিটু শেখসহ সকল আসামি নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেন।
আছিয়া হত্যা মামলায় তারেক রহমান নির্দেশিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবী প্যানেলের আহবায়ক শাহেদ হাসান টগর বলেন, আছিয়া হত্যা মামলায় আসামিদের পক্ষে মাগুরা বারের কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
আজও আদালতে হিটু শেখদের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাড়াতে দেখা যায়নি। আছিয়া মামলায় আমরা ৫ আইনজীবী মিলে রাষ্ট্র পক্ষে সার্বিক সহযোগিতা শুরু থেকে যেভাবে করছি শেষ পর্যন্ত করবো।
আছিয়ার মা আয়েশা বেগম বলেন, বুধবার শুনানি শেষে চার্জ গঠন করা হয়েছে। ৩ সাক্ষীকে আগামী ২৭ তারিখে সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসার দিন ধার্য করা হয়েছে। শিশু আছিয়ার পক্ষে মামলায় অংশগ্রহণ করেন, আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পরামর্শে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী।
তিনি মাগুরা আদালতে উপস্থিত হয়ে বলেন, এ মামলাটি চাঞ্চাল্যকর একটি মামলা যা দেশসহ বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই মামলাটি যেন দীর্ঘায়িত না হয় সে ব্যাপারে বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরকে সুদৃষ্টি রাখার অনুরোধ করেন।
এ সময় তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে গঠিত অভিযোগ পত্রের ধারা অনুযায়ী নারী ও শিশু নিযাতন দমন আইন ২০০০ এর সংশোধিত ২০০৩ এর ৯ এর ২ ধারা এবং প্যানেল কোডের ৫০৬ ও ২০১ ধারায় অভিযোগ গঠনের জন্য অনুরোধ করেন।
বিচারক এম জাহিদ হাসান শুনানি শেষে চার্জ গঠন করে সাক্ষ্যর জন্য দিন ধায্য করেন। শুনানি শেষে এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও অন্যান্য নথির ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।আদালত সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (২) ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যু) অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে বোনের স্বামী ও ভাসুরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশে (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্ট) অভিযোগ গঠন করা হয়। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তারেক রহমানের নির্দেশনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের আইনজীবী প্যানেলের সকল সদস্যরা তাকে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
বুধবার হিটু শেখদের আদালতে হাজির করায় আদালত চত্বরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ। গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। এর আগে ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুর বোনের শ্বশুর হিটু শেখ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, ৬ মার্চ সকালে বোনের স্বামীর কক্ষে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এলে, বোনের শ্বশুর হিটু শেখ শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যাচেষ্টা চালায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। জবানবন্দিতে প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখ ধর্ষণের দায় স্বীকার করে।
https://slotbet.online/