দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৫৩নং লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিককে বিদায়ী দিনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনতা যে ভালোবাসা ও সম্মান দেখিয়েছেন, তা এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিণত হয় এক আবেগঘন মিলনমেলায়। সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে সম্মান জানাতে শিক্ষার্থীরা দুই লাইনে দাঁড়িয়ে ফুল ছিটিয়ে বিদায় জানায়।
শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর ও বাদ্যযন্ত্রের তালে ছাদ খোলা গাড়িতে তাকে রাজকীয়ভাবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। ফুলের মালা, স্লোগান ও কান্নায় বিদায় আয়োজনটি হয়ে উঠে হৃদয় ছোঁয়া।
অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সহকর্মীরা। বিদায়ের মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা আবেগ ধরে রাখতে না পেরে স্যারের পায়ে লুটিয়ে পড়ে, অনেকেই অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মৃতিময় ছবি তোলে।
শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবসে আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ৩১ বছর ৭ মাস ১৫ দিন পর আজ শেষবারের মতো অফিসের খাতায় স্বাক্ষর করলাম।
এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো। সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ভালোবাসা আমি কোনো দিন ভুলবো না। আসুন, আমরা সবাই মিলে শিক্ষার্থীদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলি।
বিদ্যালয়ের সহকর্মীরা তার শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক স্যার ছিলেন এই এলাকার শিক্ষার বাতিঘর। তিনি শুধু শিক্ষক নন, একজন আদর্শ মানুষ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি কামিনি কান্ত রায় এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্য সচিব সাইদুর রহমান সোহাগ।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গীতা রানী সরকার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মোহাম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র দেব শর্মা, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান বাবু, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লিপিকা রায়, সহকারী শিক্ষক খাদিজা শাপলা ও আফসানা নাহার প্রমুখ।
শিক্ষক মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক ১৯৯৩ সালে পলাশবাড়ী-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
২০১০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তার সততা, নিষ্ঠা ও মানবিক নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানে আসে দৃশ্যমান পরিবর্তন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য, ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ‘লক্ষ্মীপুর মিতালী সংঘ’ এর প্রতিষ্ঠাতা, বীরগঞ্জ সাহিত্য সংসদ এর সহ-সভাপতি এবং লক্ষ্মীপুর জামে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিশু-কিশোরদের জন্য তার লেখা ছড়ার বই ‘ছন্দে ছন্দে শিখি আনন্দে’ পাঠকের মন জয় করেছে।
এই বিদায়ী অনুষ্ঠানে যে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে, তা নিঃসন্দেহে এক শিক্ষকের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
স্থানীয় জনতা বলছেন, এমন বিদায় কেবল একজন প্রকৃত শিক্ষকেরই প্রাপ্য।
https://slotbet.online/