পুলিশকে উপেক্ষা করে সরকারের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন যে কঠিন, সেই বাস্তবতা মানছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, “সরকার যাই কিছু করতে চায় না কেন, যে ভঙ্গিতেই করতে চায় না কেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতেই বাস্তবায়ন করতে হয়।
“তারা করে দেবে না, তারা পরিবেশটা সৃষ্টি করে। ওই পরিবেশ না থাকলে তাহলে কোনো কাজই হয় না।”
সোমবার তেজগাঁওয়ে নিজের কার্যালয়ে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ইউনূস।
তিনি বলেন, “পুলিশকে অবহেলা করে বা পাশ কাটিয়ে গিয়ে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই তখন বাকি জিনিসগুলো হয়।’’
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন দেশজুড়ে থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আক্রমণের শিকার হতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। আগুন দেওয়া হয় থানা ও পুলিশের স্থাপনায়। লুট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
কয়েকদিন বাদে পুলিশ কাজে ফিরলেও হারানো সেই মনোবল ফেরেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।যদি ব্যর্থ হই, তবে মনে করবে- আমি চেষ্টা করেছিলাম, ব্যর্থ হয়েছি। চেষ্টার অভাবে ব্যর্থ হইনি।”
তিনি বলেন, “যাদের হাতে পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব, দেশকে তৈরি করার দায়িত্ব, তাদের তৈরি করতে না পারলে বাকি কাজ হলো না। সেই জন্য আমরা অগ্রাধিকার দিতে চাই, যেটা আমরা পারি।’
‘সম্ভাবনার দেশ’
বাংলাদেশ একটা মস্ত বড় সম্ভাবনার দেশ মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “ব্যক্তি হিসেবে এটা অনুভব করি। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে আনতে পারছি না, ঠেকে যাচ্ছে। আজকে আমরা সুযোগ পেয়েছি, মস্ত বড় সুযোগ— সেই সম্ভাবনাকে কাজে পরিণত করা।
“জুলাইয়ে অভ্যুত্থানের ফলে সেই সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্ভাবনার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। যেটুকু সময় আমাদের আছে, চেষ্টা করি। ভবিষ্যতেও যারা আসবে তারা চেষ্টা করবে, পথটা যেন আমরা সৃষ্টি করে দিই। এই পথে আমরা এগোলে সম্ভাবনাগুলো বাস্তবে পরিণত হবে।’’
সরকারপ্রধান বলেন, “’বাংলাদেশ পৃথিবীর যে সমস্ত অগ্রগামী দেশ, যারা পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেয়- তাদের মধ্যে একটি হতে পারে। সেরকম সম্ভাবনা আছে। এটা কোনো আত্মতুষ্টির জন্য না। একটু বিচার করলেই মনে হয়, হ্যাঁ, এরকম সম্ভাবনা আছে।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে ইউনূস বলেন, “গণঅভ্যুত্থান হলো, বিরাট একটা কাণ্ড। ইতিহাসের বিরাট একটা পরিবর্তন সূচিত হলো। লণ্ডভণ্ড অবস্থার মধ্যে আমরা এই যাত্রা শুরু করলাম। সারা দুনিয়ার যত দেশ আছে, সবাই আমাদের সমর্থন করলো।
“শুধু মিনমিনে সমর্থন না, উৎসাহ সহকারে এগিয়ে এল। তারা মনে করেছে, এই দেশ যদি উঠে দাঁড়াতে পারে, সেটা সবার ভালো সঙ্গী হবে। তারা আমাদের ওপর যেরকম ভরসা করেছে, আমরা আমাদের ওপর সেরকম ভরসা আনতে চাই। নতুন করে যে যাত্রা শুরু হলো, এটা মস্ত বড় সুযোগ। এই সুযোগটা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি।’’
‘নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করব’
পুলিশ বাহিনী দেশে ‘মস্ত বড়’ ভূমিকা রাখে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আইন যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারি, শৃঙ্খলা যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে যেকোনো যুদ্ধ জয় সম্ভব।
“এগিয়ে যাওয়ার যে যুদ্ধ-লড়াই, এটা আনন্দের লড়াই, কষ্টের কোনো লড়াই না। যতই এগিয়ে যায়, তত ফুর্তি লাগে। নিজের কাছেও ফুর্তি লাগে। নিজের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে ফুর্তি লাগে। আমরা একটা কাজ করছি, তারা দেখছে, তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। নিজের তৃপ্তি হচ্ছে, আমি এমন একটা ভূমিকায় আছি- যে ভূমিকায় দেশের একটা পরিবর্তন হবে।’’
তিনি বলেন, “আমরা নতুন বাংলাদেশ বলি, এটা কথার কথা না; নতুন বাংলাদেশ বলি এই কারণে যে, পুরনো বাংলাদেশ অন্ধকার যুগ আমাদের। ভয়ংকর। সেই ভয়ংকর দিনগুলো থেকে আমরা সুন্দর, ঝলমলে দিনে আসতে চাই। সেটাই নতুন বাংলাদেশ।”
ভয়ংকর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পুলিশের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ টেনে বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ইউনূস বলেন, “পুলিশ বাহিনীর মুশকিল হলো, ওই অন্ধকার যুগের তারা একটিভ পার্টিসিপ্যান্ট ছিল। নিজের ইচ্ছায় না, সরকারি কাজ করতে হয়। কাজেই ‘আমরা কাজ করেছি, আমরা হুকুম পেয়েছি, করেছি; করতে করতে আমরাও ওরকম চিন্তার ওপর গেছি’। যে
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “পুলিশের কথা প্রসঙ্গে দুটি শব্দ বারবারই আমরা বলেছি, তা হলো আইন ও শৃঙ্খলা। এটিই হলো পুলিশ।
“আইন যদি না থাকে তাহলে সরকার কি, গণতন্ত্র কি, অধিকার কি, মানুষ-নাগরিক কি— কিছুই থাকে না। আইনশৃঙ্খলা ঠিক না থাকলে যত বড় চিন্তা থাকুক, যত টাকা ঢালুক, কোনো কাজে আসবে না।”
পুলিশ সদস্যরা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন, সেসব নিয়ে বৈঠক করবেন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সমাধান করতে পারবো কি না- জানি না। কিছু কিছু জিনিস সমাধান করা অনেক কঠিন হয়ে যায়, কিন্তু চেষ্টা করব যে- কী করা যায়।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহী জেলা পুলিশের অভিভাবক সুযোগ্য পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।
https://slotbet.online/