পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নে একটি বেসরকারি এতিমখানায় এতিম ও দুস্থদের নামে বরাদ্দের টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। কাঙ্খিত সংখ্যক এতিম ও দুস্থ না থাকায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বরাদ্দের পরিমান কমালেও অজ্ঞাত কারণে বরাদ্দ বাড়িয়ে টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। এই এতিম খানাটির নাম উত্তর চারাবুনিয়া ফারুকীয় হাফেজিয়া শিশু সদন । যা জেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে।
সরকারি এতিমখানা নীতিমালা মোতাবেক এতিমখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এতিমদের জন্য আলাদা আবাসন ব্যবস্থা থাকতে হয়। কিন্তু এই এতিমখানার আলাদা আবাসিক ব্যবস্থা নেই। একটি মসজিদে একই সাথে লেখাপড়া ও আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দ ও মঞ্জুরির ক্ষেত্রে মোট এতিম ও দুঃস্থদের অর্ধেকের বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এই এতিমখানায় ৮৫ জন এতিম ও দুস্থদের প্রত্যেকের অনুকূলে বরাদ্দ আনা হচ্ছে। কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী ৮৫ জনের বিপরীতে এই প্রতিষ্ঠানে ১৭০ জন এতিম ও দুঃস্থ থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে কাঙ্খিত পরিমান এতিম ও দুঃস্থ নাই বিধায় এনিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এই এতিমখানায় মোট ৮৫ জন এতিম ও দুস্থদের প্রত্যেকের অনুকূলে দুই হাজার টাকা করে বার্ষিক মোট ২০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দ আনা হয়। এর মধ্যে জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্যাপিটেশন গ্রান্ট উত্তোলন করা হয়।
এর সত্যতা যাচাই করতে গত ১৯ এপ্রিল সরেজমিন ওই প্রতিষ্ঠানে মাত্র ১৬ জন শিশু এই এতিম খানায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে মো, ইব্রাহিম (১২), মো, তাওসিফ (১৬) ও মো, জোনায়েদ (১২) মাত্র এই তিনজন এতিম বলে জানিয়েছেন এই শিশুরা। নীতিমালা অনুযায়ী এসব শিশুদের বিনামূল্যে আবাসন, খাবার, পোষক পরিচ্ছদ, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বহন করার কখা থাকলেও এসব শিশুদের কাছ থেকে মাসিক টাকাও আদায় করা হচ্ছে বলে এখানকার শিশুরা জানিয়েছে। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে ১৭০ জন নিবাসি অবস্থানের কোন ব্যবস্থা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এই এতিমখানার নিবাসি মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুন্দ্রা গ্রামের আবুল হোসেন হাওলাদেরর ছেলে শফিকুল ইসলাম (১৫) জানায়, তার বাবা একজন জেলে। তার কাছ থেকে মাসিক এক হাজার টাকা নেওয়া হয়। সদর উপজেলার জৈনকাঠি গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো, শাকিলের কাছ থেকে মাসিক দেড় হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও আবদুল হালিম এক হাজার, নাজমুল এক হাজার ২০০ টাকা, সাজিদ দেড় হাজার, সায়েম এক হাজার ৩০০ টাকাসহ এভাবে অধিকাংশ এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের পরিবারের কাছ থেকে মাসিক টাকা আদায় করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হাফেজ আবুল হাসান জানায়, তাদের প্রতিষ্ঠানে ৬০ জনের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে উপস্থিতি কম কেন, এ প্রসঙ্গে বলেন, আসলেআশপাশের এলাকার কিছু শিশু এখানে ভর্তি হয়েছে। তারা অনেকে তাদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে। শিশুদের কাছ থেকে মাসিক টাকা আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠাতা বলতে পারবেন। এদিকে এই প্রতিষ্ঠানে ৮ জন শিক্ষক রয়েছে দাবি করলেও মোট তিনজন শিক্ষক উপস্থিত দেখা গেছে।
এই প্রতিষ্টানের কাছে চা দোকানী মো, ফয়জর আলী চৌকিদার জানান, তিনি ২২ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। এই প্রতিষ্ঠানে মোট ৪০ থেকে ৪৫ জনের মতো শিশু আছে ।
স্থানীয়রা জানায়, এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিশু না থাকলেও বছরে দুবার বিল উত্তোলনের সময় আশেপাশের মাদরাসার কিছু ছাত্র ও শিক্ষক ভাড়া তরে এনে উপস্থিতি দেখিয়ে শিশুদের সংখ্যা বাড়িয়ে তাদের অনুকূলে বিল উত্তোলন করা হয়।
এই প্রতিষ্ঠানের কাছেই জামেয়া আশরাফিয়া মাদানিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল হক কাওসারী জানান, উত্তর চারাবুনিয়া ফারুকীয় হাফেজিয়া শিশু সদনে যে সংখ্যক শিশুদের বিপরীতে সরকারি অর্থ উত্তোলন করা হয় সে সংখ্যক শিশু ওখানে নেই। সরকারি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের সময় আশে পাশের প্রতিষ্ঠান থেকে শিশু ও শিক্ষকদের ভাড়া নেওয়া হয়। আমার প্রতিষ্ঠানের শিশুদেরও কয়েকবার নেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির এসব অনিয়মের বিষয়টি জানার পর আমি এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ সকল অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠাতা মো, ফারুক হোসাইন, নিজেকে সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ না করার জন্য অনুরোধ করছি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো, জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি দুইমাস আগে এখানে যোগদান করেছি এবং সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে শিশুদের উপস্থিতি কম থাকায় আগের ৭০ জন বরাদ্দ থেকে ২০ জন কমিয়ে ৫০ জন বরাদ্দের সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু কিভাবে আগের ৭০ জন বরাদ্দ থেকে বাড়িয়ে ৮৫ জনের বরাদ্দ আনা হয়েছে তা আমার জানা নেই।ওই প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
https://slotbet.online/